September 8, 2024, 2:27 am

সাংবাদিক আবশ্যক
সাতক্ষীরা প্রবাহে সংবাদ পাঠানোর ইমেইল: arahmansat@gmail.com
সাতক্ষীরায় খনন শেষের আগেই পাড়ের মাটিতেই ফের ভরাট হচ্ছে বেতনা নদী

সাতক্ষীরায় খনন শেষের আগেই পাড়ের মাটিতেই ফের ভরাট হচ্ছে বেতনা নদী

ভৈরবের একটি শাখা নদী বেতনা। যার আদি বেত্রাবতী। যশোর জেলার নাভারন-আগআঁচড়া প্রভৃতির উপর দিয়ে সাতক্ষীরা জেলায় প্রবেশ করেছে। কলারোয়া পৌরসভার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সদও উপজেলার ঝাউডাঙ্গা, বিনেরপোতা হয়ে পূর্ব-দক্ষিণের বুধহাটা হয়ে আশাশুনির চাপড়ার কাছে মরিচ্চাপ নদীর সাথে মিলিত হয়েছে বেতনা নদী।

এক সময় সাতক্ষীরার বাণিজ্যিক রুট হিসেবে পরিচিত ছিল এই বেতনা নদী। সেময় বিভিন্ন দেশ থেকে ব্যবসায়ীরা নদীপথে সাতক্ষীরা শহরে আসতেন বাণিজ্য করতে। কিন্তু পলি জমে ও দখলের কারণে নদীটি ভরাট হওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় বাণিজ্যিক রুটটি। পানিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনতে ২০২২ সালে নদীটির খনন শুরু হলেও তা খুব একটা কাজে আসছে না বলে মনে করেন নদীপাড়ের বাসিন্দারা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, মাটি কেটে রাখা হচ্ছে নদীপাড়েই। এখন চলছে বর্ষ মৌসুম। ফলে বৃষ্টির পানিতে সেই মাটি আবার নদীতে পড়ে ভরাট হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, একের পর এক হাতবদলের কারণে নদী পুনর্খননকাজ দায়সারাভাবে করা হচ্ছে। একেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিছুদিন কাজ করার পর টাকা নিয়ে চলে যায়। পরবর্তী সময়ে আসে অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এভাবে একের পর এক হাতবদল হওয়ায় কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দাবি, প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে দ্রুত গতিতে কাজ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কাজের অনুকূলে ৪৮ শতাংশ বিল পরিশোধ করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গায় বেতনা নদীর খননকাজ করছে খুলনার সততা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, আমরা কাজটি নিয়েছি কিছুদিন হলো। এর আগে আক্কাস আলী নামে এক ঠিকাদার কাজ করছিলেন। তবে তিনি কাজ রেখে চলে যান। পরবর্তী সময়ে মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমাদের দায়িত্বে দিয়েছে। দ্রুতই কাজ শেষ করব বলে আশা করছি।

ঝাউডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা আশিষ কুমার ও আব্দুর রশিদ জানান, প্রকল্পের কাজ এক টানা হচ্ছে না। এক ঠিকাদার কিছুদিন করার পর চলে যান। এভাবে একের পর এক হাতবদল হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বেতনা নদী যেভাবে খনন হচ্ছে তাতে খুব উপকারে আসবে বলে মনে হচ্ছে। বৃষ্টির পানিতে সেই মাটি আবার নদীতে পড়ছে। মূল নদীর ৫০ শতাংশও খনন করা হয়নি।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে সদর উপজেলার হাজিপুর থেকে কলারোয়া পর্যন্ত সাড়ে সাত কিলোমিটার নদী খনন করা হচ্ছে। পটুয়াখালীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আবুল কালাম আজাদকে ২০২২ সালের ৩০ জুন কার্যাদেশ দেয়া হয়। ১০ মাস মেয়াদি প্রকল্পকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের ২১ জুন। ১০ মাসের পরিবর্তে দুই বছর পেরিয়ে গেলেও কাজের তেমন অগ্রগতি হয়নি।

নদী বাঁচাও আন্দোলন কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যক্ষ আশেক ইলাহী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের যোগসাজশে বেতনা নদী পুনর্খননে অনিয়ম করছেন। মূল ঠিকাদার কেন কাজ হস্তন্তর করবে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন কেনইবা এ সুযোগ করে দেয়। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোনো প্রকল্পের কাজ এক ঠিকাদার অন্য ঠিকাদারকে দিতে পারবে না। এতে কাজের মান ভালো হয় না। বেতনা নদী পুনর্খনন প্রকল্পে শুরু থেকে অদ্যবধি ভালো কোনো অগ্রগতি হয়নি। তাছাড়া যেভাবে খনন করা হচ্ছে তা কোনো কাজে আসবে না।

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঠিক বর্ষা মৌসুম সামনে রেখে নদী খনন শুরু করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যেই বর্ষা চলে আসে, তখন কাজ বন্ধ রাখা হয়। প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থও দেয়া হয়েছে কাজের অগ্রগতি বিবেচনা না করে।খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি নিজে না করে সাতক্ষীরার আক্কাস আলী নামে এক ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেন। কিন্তু আক্কাস আলী কাজটি করতে সময়ক্ষেপণ করছিলেন। এক পর্যায়ে খুলনার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সততা এন্টারপ্রাইজের কাছে হস্তান্তর করেন ঠিকাদার আবুল কালাম আজাদ।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে পটুয়াখালীর ঠিকাদার আবুল কালাম আজাদ বলেন, কাজটি প্রথম পর্যায়ে সাতক্ষীরার আক্কাস আলীকে দিয়ে আমি ভুল করেছি। তিনি কাজটি নিয়ে অনেক সময় নষ্ট করেছেন। পরবর্তী সময়ে খুলনার সততা এন্টারপ্রাইজকে কাজটি দেয়া হয়েছে। তারা খননকাজ দ্রুত করছে। তাছাড়া শিডিউল অনুযায়ী কাজ বুঝিয়ে দেয়া হবে। কাজে কোনো প্রকার ত্রুটি হবে না।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, কিছুদিন হলো আমি সাতক্ষীরায় যোগদান করেছি। বেতনা নদী পুনর্খননে কোনো অনিয়ম হলে সেটা মেনে নেয়া হবে না। এখ নপর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৫০ শতাংশ হয়েছে। কাজটি দ্রুত শেষ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। কাজের অনুকূলে এখন পর্যন্ত ঠিকাদারকে ৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা বিল দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।


Comments are closed.

ইমেইল: arahmansat@gmail.com
Design & Developed BY CodesHost Limited
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com